আজকের ক্যারিয়ার ভাবনায় আমরা জানবো প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টর সম্পর্কে। প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন এমন একটি কাজের মাধ্যম যেখানে সৃষ্টিশীলতা এবং বিনোদনের সাথে কাজ করা হয় আর তাই আমাদের আজকের শিরোনাম প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন আয়ের মাধ্যম যেখানে বিনোদন। এবিষয়ের সার্বিক আলোচনা করবো আজ। আজকে আলোচনায় গুরুত্ত্বপূর্ন বিষয়গুলো হচ্ছে- বাজার, ভাবনা, কাদের জন্য এ প্রফেশন, রাইটিং, প্রুফ রিডার, সম্পাদনা, ডিজাইন, মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন, বেতন-ভাতা, নিশ্চিত ক্যারিয়ার।
বাজারঃ প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন এর কথা যখন আমরা শুনি তখনি একটা বিষয় চিন্তায় আসে এখানে কাজের পরিসর খুবিই সীমিত। কিন্তুে এবিষয়ে একটু সচেতন হলেই দেখবেন এ কাজের পরিধি কতটা বিস্তর। আমরা যেখানেই তাকাই না কেন প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন এর কাজ চোখে পরবেই। এসব কাজই প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন অফিস থেকেই সম্পাদিত হয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। ভাবতে পারেন কতটা বিস্ত্রিত এর কাজের জায়গা। ঢাকার বাংলাবাজার, আজিজ সুপার মার্কেট, আরামবাগ-ফকিরেরপুল এসব অঞ্চল তো সারা বাংলাদেশে প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন এর জন্য সুপরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশের সব জেলা শহরগুলোর গন্ডি পেরিয়ে গ্রাম গঞ্জেও এর বিস্তার বেড়েছে।
প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেকটর মূলতঃ দু’ভাবে বিভক্ত, যার একটি প্রি-প্রোডাকশন এবং অপর টি পোষ্ট প্রোডাকশন। এখানে প্রি-প্রোডাকশন হচ্ছে কম্পজ, ডিজাইন, সম্পাদনা, প্রুফ রিডিং এসমস্ত গুরুত্বপূর্ন কাজ সম্পাদনা করা। এবং পোষ্ট প্রোডাকশন হচ্ছে তৈরীকৃত কাজকে মানুষের সামনে উপস্থাপনা করা। তো একটা কাজের পিছনের গুরুত্বপূর্ন কাজ যারা করে তারা প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করেন, একাজটা ক্রিয়েটিভ নতুন কিছু করবার বা স্বপ্ন দেখবার মানুষিকতা যাদের আছে তারাই মূলত এ সেক্টরে কাজ করেন। এখানে সৃষ্টিশীলতার বিকল্প কোন নাই। পক্ষান্তরে, পোস্ট প্রোডাকশনে যারা কাজ করেন তাদের অবশ্যই বিপনন বা বাজার ব্যবস্থায় ভালো দক্ষ হতে হবে।
কাদের জন্য এ প্রফেশনঃ আগেই বলেছি প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন- কে যারা প্রফেশন হিসেবে নিতে চান, তাদের অবশ্যই ক্রিয়েটিভ বা সৃষ্টিশীল হতে হয়। আপনি যদি সৃষ্টিশীল হন তাহলে ধরেই নিবেন প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টর হচ্ছে আপনার জন্যই। আশুন দেখা যাক প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশনে কাজ করতে হলে আপনার প্রস্তুতিটা কেমন হওয়া চাই। আমরা আগেই জেনেছি প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশনে কাজ করবার জন্য আমাদের কি প্রয়োজন? একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশনে কোন ধরনের কাজের মানুষ প্রয়োজন?
এ প্রশ্নটি আসবার সাথে সাথে যে কাজটি আমাদের সবারই মুখিই চলে আসবে প্রথমে সেটি হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টরে কাজ করতে হলে আমাদের যে বিষয় গুলোতে দক্ষতা প্রয়োজন সে কাজ গুলো হচ্ছে- গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কম্পোজ, প্রুফ রিডার, রাইটার বা লেখক, সম্পাদনা, বিজ্ঞাপন, ম্যনেজার, মেশিন অপারেটর, দক্ষ মেশিন টেকনিশিয়ান, আপনার যদি এসব বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই এ সেক্টরে কাজের উপযোগী। এখানে যে কয়েকটি বিষয়ে জানা থাকবার কথা বলা হয়েছে সে সব কাজেই ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল। সৃজনশীলতা না থাকলে সে এ সেক্টরে সফল হতে পারে না।
রাইটিংঃ রাইটিং একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টরে। এ প্রফেশনের প্রান বলা হয় রাইটিং। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, এই মাধ্যমে খুব একটা আগ্রহ নেই আমাদের মাঝে। রাইটিং যে একটা সৃজন শীল কাজ এটা যেন বেশীর ভাগ মানুষ মানতেই চায় না। কিন্তু এসবের মাঝে ভালো ব্যাপারটা এই যে, এমধ্যেমে যারা এখন আসছেন তাদের অনেকেই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। এটাই একটি আশার দিক। রাইটিং এ আসার প্রধান তম মাধ্যম হচ্ছে দৈনিক পত্রিকার ফিচার রাইটিং। এই ফিচার রাইটিং কে কেন্দ্র করে অনেকেই রাইটং কে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এবং সফল ও হচ্ছেন।
প্রুফ রিডারঃ প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে প্রুফ রিডারের কাজ। নির্ভূল পাবলিকেশন এর জন্য একজন দক্ষ প্রুফ রিডারের বিকল্প নেই। এ প্রফেশনে আসতে চাইলে তাকে অবশ্যই ভাষা গত দক্ষতা আবশ্যক। এখানে নিভূল বানান এবং শব্দ উচ্চারণ ভেদে বানান সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। সঠিক বা নিভূল বানান ছাড়া একটি ভালো প্রকাশনার কথা চিন্তাই করা যায়না তা সে একটি বই হোক আর যে কোন প্রকার প্রকাশনাই হোক। তাই একজন দক্ষ প্রুফরিডার এর চাহিদা প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টরে সবচেয়ে বেশী এবং গুরুত্ব পূর্ন।
সম্পাদনাঃ প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টরের প্রান হচ্ছে সম্পাদনা। দক্ষ সম্পাদনার অভাবে প্রান পায় না অনেক ভালো লেখা। একটি ভালো লেখনী, ব্রসিউর যার কথা বলি না কেন দক্ষ সম্পাদনার অভাবে কাঙ্খিত গ্রহন যোগ্যতা পায় না। আপনি যদি চিন্তাশীল এবং সৃজনশীল হয়ে থাকেন তবে প্রিন্ট এন্ড পাবিলিকেশন সেক্টরে সম্পাদনার কাজটি আপনার জন্যই।
গ্রাফিক্স ডিজাইনারঃ একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে তখনই সফলতা পেতে পারেন যখন আপনি রং আকার এবং স্বপ্ন নিয়ে খেলতে পারবেন। সৃজনশীলতায় ভরপূর একটি পেশার নাম গ্রাফিক্স ডিজাইনার। এ পেশায় আসতে হলে আপনাকে যে বিষয় গুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে- ১) অঙ্কন। ২) এডোবি ফটোসপ ৩) এডোবি ইলাসট্রেটর ৪) কোয়ার্ক এক্সপ্রেস ৫) রং এবং ডিজাইন সম্পর্কে ধারনা। এ কয়টি বিষয়ের যে কোন একটা বিষয়ে কম ধারনা একজন সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। তবে এসব বিষয়ে ভালো একটা ধারনা থাকলেই আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। এখানে ব্যস্ততা বিরক্তিকর নয় বরং ব্যস্ততার আরেক নাম বিনোদন।
মার্কেটিংঃ মানুষ জনের কাছে পৌছানোর একমাত্র মাধ্যম মার্কেটিং। আপনি যত ভালো সেবা দিয়ে থাকেন না কেন যদি আপনার তথ্য মানুষের কাছে না পৌছায় তাহলে সে প্রকাশনা যতো সুন্দর হোক না কেন তার কোন মূল্যই থাকে না। আর তাই প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশনে মার্কেটিং এর ভুমিকা অনস্বীকার্য্য। প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন সেক্টরের অন্যান্য সেক্টরের মতো এই সেক্টরও সমান গুরুত্ব পূর্ন। আপনি যদি মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো ধারোনা রাখেন তাহলে এ মাধ্যমে আপনার চাহিদা সবচেয়ে বেশী।
বিজ্ঞাপনঃ প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন সেক্টরের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় হচ্ছে বিজ্ঞাপন। প্রকাশনায় বিজ্ঞাপন ম্যনেজার, বিজ্ঞাপন সহকারী এবং বিজ্ঞাপন কর্মীর সমন্বয়ে গরে উঠে প্রকাশনার মূল কাঠামো। যে কোন প্রকাশনা নির্ভর প্রতিষ্ঠানই বিজ্ঞাপন ছাড়া বেশী দিন টিকে থাকতে পারেনা। আর তাই বলা যায় বিজ্ঞাপন কর্মীর প্রফেশন প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন সেক্টরে প্রান সঞ্চার করে।
বেতন-ভাতাঃ প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন কর্ম ক্ষেত্র যেহেতু ক্রিয়েটিভ বা সৃষ্টিশীল আর সেক্ষেত্রেে এখানে বেতন ভাতা্ও নির্ধারন করা হয়ে থাকে তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা এবং জানার দক্ষতার ভিত্তিতে। যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের বেতন হয়ে থাকে ১০,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রুফ রিডারদের বেতন ৮,০০০ টাকা থেকে ২২,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। রাইটিং একটা স্বাধীন পেশা আর তাই এই পেশায় বেতন হয়ে থাকে চুক্তি ভিত্তিক। চুক্তি ভিত্তিক হলেও একজন দক্ষ লেখক প্রতি মাসে নূন্যতম ৩০,০০০ টাকা থেকে ১০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। সম্পাদনা বিভাগে একজন ১২,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মার্কেটিং এ মূল বেতন কম হলেও একজন দক্ষ মার্কেটারের সর্বোসাকুল্যে কম বেতন পান না। তবে একজন মার্কেটার গড় পড়তা ৮,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পেয়ে থাকেন। এবং টার্গেট ফিলাপের মাধ্যে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ মার্কেটারদেরই আছে।
সবশেষে একটা কথাই বলা যায় যে, প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন এমন একটি কাজের মাধ্যম যেখানে কাজের নিশ্চয়তা শত ভাগ। অন্য যেকোন সেক্টরে কোন কারনে কাজ চলে গেলে আরেকটি কাজ পেতে একটু সময় লাগে কিন্তু প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন সেক্টরে কোন কারণে কাজ চলে গেলে আরেকটি কাজ খুব সহজেই পাওয়া যায়। এ সেক্টরে অভিজ্ঞদের কাজ খুজতে হয় না কাজই তাদের খুজে নেয়। এক কথায় নিশ্চিত কাজের জায়গা প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন সেক্টর।