ক্যারিয়ার যখন পোশাক শিল্প

Self education it garments Industries

সেল্ফ এডুকেশন আইটি এর সম্মানিত পাঠক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্যারিয়ার ভাবনায় আমাদের আজকের বিষয় পেশা যখন পোশাক শিল্প।

পোশাক শিল্প বিশ্বে বহুল জনপ্রিয়, পরিচিত এবং ব্যবসায়ীক দৃষ্টিতে এক সফল শিল্পের নাম। এটা এমন একটি শিল্পের নাম যেখানে এ শিল্পের ব্যাপ্তি দিনকে দিন শুধু বৃদ্ধিই পাবে। কারন এর চাহিদা বিশ্বে কখনোই এ শিল্পের চাহিদা কমবে না কারন মানুষ

সৌন্দর্য্য পিপাশু তাই তারা কখনো ফ্যাশানেবল পোশাক ছাড়া নিজেদের ভাবতেই পারে না এবং কখনো ভাববেও না।

আমাদের অনেকেরই পোশাক শিল্পের প্রতি একটি বিরুপ মনোভাব রয়েছে। আর তাই আমরা আজকে পোশাক শিল্প যে একটি সম্মান জনক এবং সু-নিশ্চিত ক্যারিয়ার সে বিষয়েই আলোচনা করবো।

বর্তমান বিশ্ব বাজারে এবং আমাদের দেশের কর্ম ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আর এর ফলে দেশের ও বিদেশের বাজারে এই সেক্টরে কাজ পাওয়াও অনেক সহজ।

আমরা জানি পোশাক শিল্পে এবং বায়িং হাউজে প্রতি বছর দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হয়। যাদের বেতন অনেক বেশী। এ পেশায় প্রচুর দক্ষ জনশক্তি’র চাহিদা থাকায় আমাদের দেশেও গড়ে উঠেছে অনেক প্রফেশনাল প্রশিক্ষন একাডেমী।

বাংলাদেশে চাকরীর বাজারে চাহিদা সম্পন্ন পেশার মাঝে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এর চাহিদা অন্য যেকোন পেশার চেয়ে অনেক বেশী। চাহিদার বিবেচনায় বাংলাদেশে এখনো দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার অপ্রতুল। চাকরীর বাজারে এতো চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পের দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। এতে এই শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পের একটি বলে স্বীকৃত।

বিশ্ব বাজারে বর্তমানে এই শিল্প নিজেদের জায়গা দখল করে রেখেছে। আর যার ফলে এই শিল্পে দক্ষ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে।

আর তাই গার্মেন্ট শিল্প, টেক্সটাইল মিল্স, ফ্যাশান হাউজ, বুটিক হাউজ, বায়িং হাউজ এবং ঋন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ সব সময় আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা এতোটাই বেশী যে অনেক ক্ষেত্রে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফ্যাশান ডিজাইনিং বিষয়ে পাশ করবার আগেই চাকরী হয়ে যায়।

এতোক্ষন তো আমরা জানলাম এই সেক্টরে চাকরীর বাজার সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো এমন একটা লোভনীয় চাকুরী পেতে হলে আমাদের কি কি বিষয়ে প্রশিক্ষন নিতে হবে।

পেশা যখন পোশাক শিল্প
Image Source: master-mechanical-engineering.com

 

প্রশিক্ষন বিষয়ঃ প্রতিটি কাজের জন্যই প্রশিক্ষন একটি আবশ্যিক বিষয়। প্রশিক্ষন ছাড়া কোন কাজেই সফলতা লাভ করা যায় না। আর তাই এই সেক্টরে সফল হতে হলে আমাদের যে বিষয় গুলোতে প্রশিক্ষন নিতে হবে আর সে বিষয়গুলো হচ্ছে- টেক্সটাইল, এ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং এবং ফ্যাশান ডিজাইনিং এ অনার্স, এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে। বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার তৈরীর ক্ষেত্রে সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রশিক্ষন কার্য্যক্রম চালু আছে। তবে এসব প্রতিষ্টানের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আয়োতাধীন “কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজি” এর চাহিদা সবচেয়ে বেশী।

এর বাইরেও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এর আয়োতাধীন ৪ বছর মেয়াদী “ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং” প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরেও সল্পমেয়াদী ও দীর্ঘ্য মেয়াদী এ্যাপারাল মার্চেন্ডাইজিং, ফ্যাশান ডিজাইন ট্রেডগুলো চালু আছে। যা আমাদের এই সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে।

কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজি দুটি ট্রেড এ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে, যার একটি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অপরটি স্পেশালাইজেশন ইন ইয়ার্ন ফেব্রেক্সি ওয়েট প্রসেসিং। 

শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্রেঃ বাংলাদেশের চাকরীর বাজারের সবচেয়ে চাহিদার চাকুরী হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, গার্মেন্ট, ডিজাইনিং এবং ফ্যাশান ডিজাইন। সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সরকারী ভাবে বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রি তৈরী এবং সেখানে এই সব প্রশিক্ষিত জনশক্তি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এছাড়া বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশী বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, বায়িং হাউজ, গার্মেন্ট শিল্পে, বুটিক হাউজ, ফ্যাশান হাউজ ও টেক্সটাইল কাজের অনেক বেশী সুযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা টেক্সটাইল এর প্রশিক্ষত দক্ষ জনশক্তি বিভিন্ন টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রির বিভিন্ন পন্য উৎপাদনের প্রান বলেই বিবেচিত হয়।

বেতন এবং আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধাঃ আমাদের দেশে টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রিতে কাজ করতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। প্রথমিক অবস্থায় অধ্যায়নরত একজন ছাত্র যে কোন প্রতিষ্ঠানেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন চাকুরীর সুযোগ পেতেই পারে।শিক্ষা জীবন শেষে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো হবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক বেশী।একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন সাধারনতঃ তার শিক্ষাগত যাগ্যতা, অভিজ্ঞতা, এবং সিদ্ধান্ত মেকিং এর যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে তাদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ে।

আর যোগ্যতা বৃদ্ধির সাথে সাথে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন এবং আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ৫ থেকে ৭ বছরের মাঝেই বেড়ে নূন্যতম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এখানে খেয়াল রাখা জরুরী যে সময়ের সাথে সাথে নিজের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই বেতন এবং আনুষাংজ্ঞিক সুযোগ সুবিধা অনেক বেশী বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। যা অন্য কোন পেশায় প্রায় অসম্ভব।

আমরা এখানে এমনটা বলতে পারি যে, এই পেশায় পরিশ্রমী, মেধাবী, এবং ক্রিয়েটিভ, ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন দক্ষ কর্মী এই পেশা সিলেক্ট করলে সফলতা তার হতের নাগালের মধ্যেই থাকবে। তবে পরিশ্রম বীমূখ কর্মীর এখানে উন্নতি করা অসম্ভব। আসলে অলস মানুষের এখানে কোন সুযোগই নাই।

পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা এই বলতে পারি যে, বাংলাদেশের তৈরী পোষাকের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। ফলশ্রুতিতে গার্মেন্ট, বায়িং হাউজ, ফ্যাশান ডিজাইন এবং পোশাক শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ইন্ডাষ্ট্রির সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। ইন্ডাষ্ট্রির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ শিল্পের প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীর সংখ্যাও।

অতএব ভাববার বিষয় এখনই যে, নিজেকে ক্রিয়েটিভ, পরিশ্রমী, মেধাবী ও ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যাক্তি মনে করলে এ পেশা আপনার জন্যই অপেক্ষা করে আছে।আর তাই কোন দিকে না তাকিয়ে আজই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, গার্মেন্ট, ডিজাইনিং এবং ফ্যাশান ডিজাইন এবং এ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ট্রেডে ভর্তি হয়ে, এই সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। হতে পারেন চাকুরীর বাজারে চাহিদা সম্পন্ন এক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *